কিম জং উন, বেঁচে আছে না মারা গেছে?



রকেটম্যান খ্যাত উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন গত একমাস যাবত লোকচক্ষুর আড়ালে অবস্থান করায় তাঁকে নিয়ে শুরু হয়েছে নানান জল্পনা কল্পনার। অনেকেই বলেছেন কিম সম্ভবত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে আবার কেউ কেউ বলছেন তাঁর হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচারের ফলে মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় আছেন। 

বিশ্ব মিডিয়ায় এ নিয়ে বিশাল তোলপাড় চলছিলো গত দুই সপ্তাহ।  তবে গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টকে কিম এর পাঠানো  একটি চিঠি থেকে এই জল্পনা কল্পনার অনেকটাই অবসান ঘটেছে।  দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসাকে কিম জং উন শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে এই চিঠিটি পাঠান। দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার করার কথা এতে উল্লেখ করা হয়। 

কিমের মৃত্যু কিংবা অসুস্থতার বিষয়ে সন্দেহের সূত্রপাত গত ১৫ এপ্রিল থেকে তীব্র হতে থাকে।  কেননা ১৫ এপ্রিল ছিলো উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা  কিম জং উনের  দাদার জন্ম  বার্ষিকী। এটি কোরিয়ানদের কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। কিন্তু এদিন কিমের অনুপস্থিতি সকলের মনে সন্দেহ তীব্র করে তোলে,  তাহলে কি কিম মৃত্যু বরণ করেছে? 

যাহোক সব শেষ মহাকাশ থেকে তোলা একটি ছবি প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন ভিত্তিক একটি ওয়েবসাইট যেটি উত্তর কোরিয়ার উপর গবেষণা করে থাকে। তারা সেখানে দেখান যে দেশটির পূর্ব তীরবর্তী অঞ্চল ওনসান প্রমোদ কুঞ্জের কাছে একটি বিলাসবহুল ট্রেন পার্কিং করা আছে।  ধারণা করা হয় এই বিশেষ ট্রেনটি কিমকে বহন করে থাকে।  

কিমের এই প্রমোদ কুঞ্জে ৯টি বিলাসবহুল গেস্ট হাউস, একটি প্রমোদ প্রাসাদ,  একটি প্রতিরক্ষা বন্দর ও একটি ছোট রানওয়ে আছে যেটি ২০১৯ সালে ঘোড়দৌড়ের জন্য রুপান্তর করা হয়। তথ্যটি জানিয়েছে সিএনএন। 
 ১৯৮৪ সালে প্রথম মিসাইল পরিক্ষা চালায় দেশটির প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সুং, তিনি মোট ১৫ টি মিসাইল পরিক্ষা চালায় দশ বছরে।  তার মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসে কিমের বাবা কিম উন ইল ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তার শাসনামলে মোট ১৬ মিসাইল পরিক্ষা চালায়।  আর কিম ক্ষমতায় আসার পর থেকে অর্থাৎ ২০১১ থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর  পর্যন্ত মোট ১১৯ টি মিসাইল পরিক্ষা চালিয়ে রকেটম্যান খ্যাতি লাভ করেন। 
প্রতিবেশীকে সব সবসময় তটস্থ রাখা কিমের স্বভাবসুলভ বিষয়ে পরিনত হয়েছিল। দুই প্রতিবেশী জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে সবসময় মিসাইল দাগিয়ে তটস্থ রাখতো। এমনকি বেলুনে মল উড়িয়ে গন্ধ ও ময়লা ছিটিয়েও দক্ষিণ কোরিয়ার সিমান্তবর্তী অঞ্চলকে অস্থির রাখা তার কাছে ছিলো একটি খেয়ালী কাজ। 
২০১৮ সালে গুঞ্জন শুরু হয় কিমের মিসাইল মার্কিন সীমানা পর্যন্ত আক্রমণ করতে সক্ষম আর তখনি খুব জোড়ে শোরে তৎপর হয়ে উঠে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিমের সাথে একটা রফাদফায় পৌছতে।  যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব শুরু হয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত তা আর যুদ্ধে না গড়িয়ে আলোচনার টেবিলে বসিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং উনকে। যেটি কিম-ট্রাম্প সিংগাপুর সামিট নামে পরিচিত।  তবে উত্তর কোরিয়া ও ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগে বহু আগে থেকেই অভিযুক্ত করে আসছিলো পশ্চিমা দেশগুলো। ইরানকে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরন চুক্তিতে স্বাক্ষর করালেও পেরে উঠেনি খ্যাপাটে উত্তর কোরিয়ার সাথে।  অনেকে মনে করেন এখানে মার্কিনীদের "শক্তের ভক্ত নরমের জম" নীতির প্রতিফলন ঘটেছে। 
যাহোক কিমের এই অন্তর্ধানের ফলে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছিলো কে হবে পরবর্তী মসনদের অধিকারী?  ধারনা করা হয়ে থাকে কিম জং উনের পর তার বোন হবে ক্ষমতার উত্তরাধিকারী। সেই আলোচনাও চলে এসেছিলো সামনে।  
এই সকল জল্পনা কল্পনার অবসান হবে হয়তো যখন মি. রকেটম্যান জনসম্মুখে আবার হাজির হবে।  
উল্লেখ্য,  এর আগে ২০১৪ সালেও কিম জং উন  লোকচক্ষুর আড়ালে অবস্থান করেছিলো ৪০ দিন সময়। এভাবে মাঝে মাঝে হারিয়ে যাওয়া তাদের পারিবারিক ঐতিহ্যও বটে। তার পূর্বপুরুষরাও এভাবে মাঝে মাঝে হারিয়ে যেতো!

~জাহিদ আবেদীন 
২৮/০৪/২০২০

Comments

Popular posts from this blog

দেশে দেশে বইমেলা ও অমর একুশে বইমেলার ইতিহাস:

করোনা মহামারী ও সাম্প্রতিক পৃথিবী

করোনা প্রতিষেধক আবিষ্কার